মিয়াও

মিয়াও


২০১৫ সাল। আবির ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দেখতে ব্যস্ত। তার মা রান্নাঘরে। হঠাৎ দরজায় ধাক্কা মারার শব্দ হলাে? আবির বিরক্তির সাথে সােফা থেকে উঠে দরজা খুলল, দেখল বাইরে কেউ নেই। মহাবিরক্ত হয়ে দুইবার চেঁচালাে, “কে, এই কে?” ‘আবিরের মা ওদিক থেকে জিজ্ঞেস করলেন কে এসেছে। আবির বলল, কেউ না মা, মনে হয় নিচতলার সাদাব দুষ্টমি করছে। এই বলে যখন দরজা লাগাতে যাবে তখন-ই দরজার পিছন থেকে একটি বিড়ালের ডাক শােনা গেল। আবির দরজার পিছনে তাকিয়ে দেখে একটি ফুটফুটে বিড়ালের বাচ্চা গুটগুটি মেরে বসে আছে। আবির তাকে দেখেই হাতে তুলে নেয়। “বাহ্ কী সুন্দর বলে বিড়ালটির গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। আবির যখন বিড়াল ছানাটিকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকবে তখন দেখে তার মা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আবির ভয়ে হাত পিছনে করে নেয়। তার মা তাকে বলে, “আবির তাের হাতে ওটা কী...। কথা শেষ করার আগেই তার মা তাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন। বললেল ছি! ছি! যা ওটাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আয়, হলে পিটিয়ে গায়ের চামড়া ছিড়ে ফেলব।”  আবির তখন কী করবে ভেবে না পেয়ে মা’র থেকে বাঁচার জন্য বিড়াল ছানাটিকে বাইরে ছেড়ে দেয়। সারা দিন তার মনে একটা কথাই ঘুরপাক করে বিড়ালটি কী খাবে? কোথায় থাকবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আবির পড়ায় মন দিতে পারে না। বিকেলে কোচিং-এ গেলে চুপচাপ বসে থাকে কারাে সাথে কথা বলে না। দুদিন পর যখন তার বাবা ঢাকা থেকে ফিরল তখন বাবার কাছে বায়না ধরল যে সে বিড়ালটিকে পুষবে। তার বাবা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু ছেলের জেদের কাছে হার মানতে হয়।

আবিরের জেদগুলাে তার বাবার কাছেই চলে, মায়ের কাছে সে তো ইদুরের
বাচ্চা।
পরের দিন আবির গেল বিড়াল ছানাটিকে খুঁজতে। কোথাও খুঁজে না পেয়ে সে যখন বাড়ি ফিরে আসছিল তখন বিড়াল ছানাটির চিৎকার শুনতে পেল। সে দেখল কয়েকটা টোকাই ড্রেনের সামনে দাড়িয়ে হাসছে। আবিরের বুঝতে বাকি থাকল যে তারা বিড়াল ছানাটিকে ড্রেনে ফেলে দিয়েছে। আবির দৌড়ে যায় ট্রেনের সামনে। দেখে ছানাটি সাহায্যের জন্য অবিরাম চিকার করছে। আবির নিজে বিড়ালটিকে উদ্ধার করতে পারে না কারণ কোনােভাবে যদি তার মা জানতে পারে যে আবির ড্রেন থেকে বিড়ালটিকে তুলেছে তাহলে সে মায়ের প্যাদানি খাবে নির্দ্বিধায়। আবির টোকাইগুলােকে বলে বিড়ালটিকে তুলে দিতে, তারা রাজি হয় না। অবশেষে আবির যখন পকেট থেকে ৬-৭ টি চকলেট বের করে তাদেরকে পুনরায় প্রস্তাব দেয় তখন তারা রাজি হয়ে যায়। তারা বিড়ালটিকে ড্রেন থেকে তুলে শ্যাম্পু দিয়ে গােসল করিয়ে দেয়। আবির তখন বিড়ালটিকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়। এখন বাড়িতে বিড়ালটিকে নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা না কারণ আবিরের বাবা আবিরকে কথা দিয়েছে তার মা’কে মানিয়ে নিবে। আবির খুশিতে আকাশে উড়তে থাকে। | বাড়ি নিয়ে গিয়ে আবির একটি জুতার বাক্সে বিড়ালটিকে বিছানা করে দিল। একটা বাটিতে পানি দিয়ে গুড়াে দুধ গুলে তাকে খেতে দিল। আবির বিড়ালটিকে একটি নামও দিল, নামটা হলাে মিয়াও।
কয়েকদিন পর আবির বিস্ময়ের সাথে আবিষ্কার করল এ বিড়াল কোনাে সাধারণ বিড়াল নয়। এ বিড়াল আবিরের কথা বুঝতে পারে এবং আবির কোনাে কিছু আদেশ করলে তা হাড়ে হাড়ে পালন করে। ঐ যে সেদিন আবির যেদিন মিয়াও’কে বাড়ির পেছনের মাঠটি দেখিয়ে বলল, “ এই মিয়াও তুই আজ থেকে এখানে এসে পটি করবি আর পটি লাগলে মার পা চাটতে লাগবি, বুঝলি?” মিয়াও মাথা ঝাঁকিয়ে আবিরকে জানান দিল যে সে ওটা করবে। আবিরের বাড়ির কাজের বুয়াটা দারুণ বদমাশ এবং চোর ধরনের। তিনি বিভিন্ন রকমের অজুহাত দেখিয়ে মাসে
ত্রিশদিনের ভেতর দশ দিনেই বাদ দেয় অথচ বেতনের
টাকাটা গুনে গুনে নেয়। এক টাকাও এদিক-ওদিক চলবে।
। আবিরের মাও পড়েছেন বিপাকে, এই নতুন পাড়ায়
নতুন কাজের বুয়া পাওয়া দায়। আর যেদিন থেকে মিয়াও
এসেছে সেদিন থেকে তিনি মা’কে বিভিন্নভাবে রাজি করানাের
চেষ্টা করেন যেন মিয়াও’কে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া
হয়। কিন্তু আবিরের মা তা করলেন না তারও কেমন জানি
বিড়ালটির ওপর মায়া জন্মে গেছে। বড় কথা হলাে আবিরের
বাবা যখন গােসল করতে যায় তখন কাজের বুয়া কৌশলে
ঘরে ঢুকে কৌশিক সাহেবের অর্থাৎ আবিরের বাবার প্যান্টের
পকেট থেকে টাকা চুরি করে নেয়। কিন্তু যেদিন থেকে
মিয়াও এসেছে সব ঘর খােলা থাকে না বিশেষ করে কৌশিক সাহেবের ঘরটা। আবির বিভিন্নভাবে আশ্বস্ত করেছে তার
বাবা-মা’কে, যে মিয়াও তাদের ঘরে যাবে না তবুও আবিরের
মা দরজা লাগিয়ে রাখেন যেন মিয়াও ঘরে ঢুকতে না পারে।
এতদিন ধরে ২০-৩০ টাকা চুরি হয়ে আসছিল কিন্তু সেদিন
ঘটে গেল অনেক বড় কান্ড! আবির যখন স্কুল যাওয়ার জন্য
তৈরি হচ্ছিল তখন তার বাবা-মার ঘর থেকে কোলাহল শুনতে
পেল। গিয়ে জানতে পারল মায়ের সােনার চেনটা চুরি গেছে। আবির বুঝতে পারল এটা ঐ কাজের বুয়ার কাজ। কাজের
বুয়া বাবা-মার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা
করছে। কৌশিক সাহেব তাকে বিভিন্নভাবে বােঝানাের চেষ্টা
করলেন, যদি নিয়ে থাকে তবে যেন দিয়ে দেয় কিন্তু কাজের
বুয়ার মুখে সেই এক কথা, “ না ভাই, আমি এই জিনিস নিয়া
কী করমু, আমি মানুষের বাড়ি কাজ কইরা যা আয় রােজগার
করি তাতেই আমার সংসার চলে। আমি চুরি করতে যামু কি
জন্য।” আলােচনার এক পর্যায়ে কৌশিক সাহেব যখন বলে
উঠলেন যে পুলিশ ডাকবে ঠিক তখন-ই ঘটে গেল কান্ড।
কাজের বুয়া পেছনে সরে এসে তার ব্যাগ থেকে একটা চাকু
বের করে আবিরের গলায় ধরল।
“ খবরদার যদি ফোন করেন, আইজকা এখানে লাশ
পইড়া যাইব গা।”
আবিরের মা চেঁচিয়ে উঠলেন, “ এ কী করছ রহিমা, তুমি
আবিরকে ছেড়ে দাও। আমাদের ওই চেন লাগবে না। তুমি
ওকে ছেড়ে দাও প্লীজ।” বলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
এদিকে আবির আতঙ্কিত। রহিমা আবিরের গলায় চাকু
ধরে দোতলার সদর দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজা
খােলার পর রহিমা আবিরকে নিয়ে বাইরে বের হতে যাবে
তখন কোনখান থেকে মিয়াও রহিমা বুয়ার ঘাড়ে লাফিয়ে
পড়ল এবং দিল এক কামড় বসিয়ে। এই সুযােগে আবির
তার হাত থেকে ছুটে নিচে পড়ে যাওয়া চাকুটা নিয়ে দরজার
এপাশে অর্থাৎ বাড়ির ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল এবং
সাথে সাথে তার বাবার ফোন নিয়ে নিচতলার সাদাবের
আম্মুকে কল দিল এবং তাদের সতর্ক করে দিল যেন কোনাে
মতেই দরজা না খুলে। ওদিক রহিমা বুয়া ব্যথায় কাতরাতে
কাতরাতে মিয়াও এর পেছনে ধাওয়া করে আর মিয়াও
দোতলার ছাদে ওঠার দরজার ফাঁক দিয়ে ঘরে পালিয়ে যায়।
রহিমা বুয়া মিয়াও-এর আর পাত্তা পায় না কারণ ছাদে ওঠার
দরজায় তালা মারা। রহিমা বুয়া ক্লান্ত হয়ে নিচে নামতে
থাকল। নিচতলায় গিয়ে দেখে এই বিল্ডিং-এর সদর দরজায়
তালা ঝুলছে যার চাবি সে ব্যাগে রেখে এসেছে। তিনি তার
আশেপাশে কিছুই পেলেন না যা দিয়ে তালাটা ভাঙবেন।
উপায় না পেয়ে সাদাবদের দরজায় ধাক্কা দেওয়া শুরু করল।
কিন্তু সাদাবদের আগে সাবধান করে দেওয়ায় তারা দরজা
আর খুলে নি।
অবশেষে পুলিশ এলে সাদাবের আম্মু তাদের বারান্দা
দিয়ে বের হয়ে বিল্ডিং-এর সদর দরজার তালা খুলে দিলেন
এবং রহিমা বুয়া পুলিশের হাতে ধরা পড়ল। এই ঘটনার পর
থেকে মিয়াও আবিরের পরিবারের চোখে হিরাে হয়ে গেল।
আজ আবিরের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে।
আবির গণিতে পেয়েছে ৩৩, মানে টেনেটুনে পাশ। আবিরের
টিচাররা বাড়িতে ফোন করেছে। ফোনের ওদিক থেকে ভেসে আসছে, “ আমরা কল্পনা করতে পারছি না যে আবিরের মতাে
একটা মেরােটোরিয়াস স্টুডেন্ট, যে স্কুলের সেরা দশ ছাত্রের
মধ্যে অন্যতম সে গণিতে ৩৩ পেয়েছে। আপনার উচিত তার
পড়ালেখার দিকে একটু খেয়াল রাখা, না হলে সে তাে গােল্লায়
যাবে।”
ফোনে কথা বলা শেষে আবিরের মা আবিরকে ডাক
দিলেন। আবিরকে প্রশ্নে জর্জরিত করে দিলেন। কেন এমন
হলাে, তুই কি কোচিং ফাঁকি দিয়েছিলি ইত্যাদি ইত্যাদি নানান
ধরনের প্রশ্ন। সেদিন আবিরের উপর দিয়ে রীতিমতাে
টর্নেডাে বয়ে গেল। রাতে যখন আবির তার বাবার ডাকে
ডাইনিং-এ আসলাে, আবিরের পেছন পেছন মিয়াও-ও ছিল।
মা তাে মিয়াও’কে দেখে অগ্নিশর্মা। তিনি বলে উঠলেন,
“ এই পাজি বিড়ালের বাচ্চার জন্য আজ তাের এই অবস্থা।”
এই কথাটা বলে তিনি মিয়াও’কে তেড়ে আবিরের ঘরে রেখে
আসলেন।
সেদিন রাতে আবিরের মা সিদ্ধান্ত নিলেন মিয়াও’কে
বাইরে কোথাও ছেড়ে দিয়ে আসবে। সেই অনুয়ায়ী তিনি
কাজও করলেন। কিন্তু সকালে যখন কৌশিক সাহেবকে
অফিসে বিদায় জানানাের জন্য দরজা খুললেন, তখন দেখলেন
মিয়াও বসে থেকে তার নিজের পা চাটছে। আবিরের মা
বুঝতে পারলেন মিয়াও-এর আশেপাশের এলাকা খুব
ভালােভাবে চেনা আছে, তা না হলে দুই মাইলের মতাে দূরের
ডাসবিন থেকে সে এখানে এলাে কীভাবে! আবিরের মা
হয়তাে ভুলে গিয়েছিলেন সেখানেই আবিরের কোচিং আবির
রােজ মিয়াও’কে তার কোচিং-এ নিয়ে যেত এবং আশেপাশে
খেলতে দিয়ে ক্লাস করত, তাই মিয়াও খুব সহজে রাস্তাটা
চিনে ফেলেছে। তাই সে যাত্রায় মিয়াও বেঁচে যায়।
আজ আবিরের মা আবিরের নানির বাড়ি যাচ্ছে। আবির
প্রথমে যেতে চাচ্ছিল, কিন্তু তার মা’র কড়া বারণে মন খারাপ
করে থেকে গেল। তিনি বললেল, “ আবির শােন, আমি এখন
যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু বিকেলের মধ্যে ফিরে আসব। খাবার সব।
রেডি আছে, ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিবি। আর শােন একটা
বাজার করা একটা ব্যাগ আনতাে।” আবির দৌড়ে গিয়ে
রান্নাঘর থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে এলাে এবং মা’কে দিল।
“ আবির তাের মিয়াও কই রে?” তিনি জিজ্ঞাসা করলেন।
আবির দেখল মিয়াও তার লেজ তুলে আবিরের মায়ের
সামনে এসে হাজির হলাে। যেই না মিয়াও এসে মার সামনে
দাড়ালাে, অমনি মা তাকে খপ করে ধরে ব্যাগের মধ্যে পুরে দিল। আবির চেচিয়ে উঠল, "এ কী করছ মা, ওকে বের করো"
কিন্তু তার মা তাকে স্পষ্ট বলে দিল তিনি মিয়াও'কে 
যেখানে সেখানে ফেলবেন না। | তিনি তার মার বাড়ির কাজের
লােকের বাড়িতে মিয়াও’কে রাখবেন। | আবির যদি পিএসসি
পরিক্ষায় GPA-5 পায় তবে তিনি মিয়াও’কে বাড়িতে ফেরত
আনবেন। আবির তার মায়ের এরকম আচরণে খুবই মর্মাহত
হলাে এবং মনে মনে ভাবল বড়রা এত খারাপ কেন?
আবিরের মা আবিরকে ধােকা দিয়েছে। আবির পিএসসি
পরীক্ষায় GPA-5 পাওয়ার সত্ত্বেও মিয়াও’কে বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসেননি বরং আবার নতুন শর্ত আরোপ করেছেন, ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ছাড়া ওই বিড়াল বাড়িতে ঢুকবে না। তার মার এই আচারণে আবির হতাশ হয়ে গেল। মন খারাপ করা ছাড়া আর কিছুই থাকল না, কারণ তার জেদ খাটে শুধু তার বাবার ক্ষেত্রেই। 
আজ আবিরের খুশির সীমা রইল না। সে ট্যালেন্টপুলে
বৃত্তি পেয়েছে এমন কি জেলায় সে হয়েছে দ্বিতীয়। আবিরের
মা আর কোনাে কারণ দেখাতে পারলেন না মিয়াও’কে
আনার। প্রথমে তিনি ইতস্তত করছিলেন এবং বলতে
যাচ্ছিলেন ক্লাস এইটের জে. এস. সি পরীক্ষার কথা কিন্তু
আবিরের বাবা তা বলতে নিষেধ করলেন। তাদের শহর
থেকে তার নানির বাড়ি বেশি দূরে না। ইজিবাইকে করে ৫০
মিনিটের মতাে লাগে। যখন তারা গন্তব্যের বেশ কাছাকাছি
অবস্থানে আবির তখন রাস্তার বামপাশ দিয়ে মিয়াও হেঁটে
যাচ্ছে। আবির গাড়ি থামাতে বলল, গাড়ি থেকে নেমে
মিয়াও-এর দিকে উদ্দেশ্য করে চেঁচালাে, “ এ মিয়াও”।
মিয়াও যখন আবিরের দিকে ঘুরে তাকাল তখন আবিরের খুশি দেখে কে। আবির বিস্মিত হলো মনে মনে ভাবল, "আমার মিয়াও আমাকে এখনও মনে রেখেছে!" আবিরকে দেখে মিয়াও চলে আসতে থাকে। যখন মিয়াও রাস্তার মাঝে তখন রাস্তার পূর্বপাশ থেকে একটা পাথর বােঝাই
করা ট্রাক আসছিল। আবির আবেগাপ্লুত হয়ে দৌড়ে মিয়াও
এর কাছে গেল এবং হাতে তুলে নিল। আবির যখন তার
ডানদিকে হর্ণের আওয়াজ পেয়ে তাকালাে ততক্ষণে অনেক
দেরি হয়ে গেছে। ওদিকে আবিরের গাড়ি থেকে চেঁচাতে
থাকলেন কিন্তু ট্রাকটি আবির আর মিয়াও ’ কে রাস্তার মাঝে
পিষে চলে গেল। রাস্তার মাঝে পড়ে রইল রক্তিম বর্ণের
মাংস। যে ছেলেটি ৫ সেকেন্ড আগেও একটি সুস্থ সবল মানুষ
ছিল সে এখন রাস্তায় পড়ে থাকা অনেকগুলাে মাংসের টুকরা।
আবিরের মা ঐ দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।
এখন প্রতি রাতে আবিরের বাসার ডাইনিং-এর পাশে ছােট
রুমটা থেকে থেমে থেমে চিল্কার আসে,“ মা, দেখ! আমার
মিয়াও কাঁদছে, আমিও কাঁদছি, তুমি আমাদের কাছে কবে
আসবে? ” বিদেহী আত্মার এমন চিঙ্কারে ওই বাড়িটা ভুতুড়ে
হয়ে গেছে। আবিরের মা এখন পুরােপুরি পাগল। প্রায় চার
বছর পার হয়ে গেছে আবিরের মৃত্যুর। আবিরের মার যখন
জ্ঞান ছিল তখনকার তথ্যসূত্রে জানা যায় তার ছেলে ট্রাকের
নিচে চাপা পড়ার সময়কার চিকার আর বিড়ালের কান্নার
আওয়াজ রােজ পেতেন তিনি। একসময় তার কানের পর্দা
ফেটে যায় এই আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে। আর এখন
প্রতিরাতে তার মুখ থেকে দুইটা বাক্য বের হয়। এক, আমার
সােনা ছেলে আয় আমাকে তাের সাথে নিয়ে যা। | দুই ’ শয়তান
পাজি বিড়াল যা পালা নইলে দিব এক ঝটার বাড়ি। অথচ
অন্যেরা কেউ তাকে অনুভব করতে পারে না শুধু সেই ছােট
ঘরটা অর্থাৎ আবিরের ঘর থেকে সেই চিৎকার বাক্য বের হয়ে
আসে,“ মা দেখ! আমার মিয়াও কাঁদছে, আমিও কাঁদছি, তুমি
আমাদের কাছে কবে আসবে? বলে এক কান্নার আওয়াজ।

Wtitten by: মো. জাহিদ ইজাজ

Photo by Ramiz Dedaković on Unsplash

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.