অদ্ভুত

  অদ্ভুত


আজ দু’দিন হলো রাজুর স্কুলে গ্রীষ্মকালের ছুটি দিয়েছে। স্কুল ছুটির আগে তার অনেক পরিকল্পনা ছিল ছুটিকে ঘিরে, কিন্তু ছুটি শুরু হবার পর তার মনে হলো স্কুল চলাকালীন সময় ছুটির চেয়ে অনেক ভালো। রাজুর সকল বন্ধুরা কোথাও না কোথাও ঘুরতে গেছে। শুধু সেই একা একা বাসায় বসে সময় কাটাচ্ছে। রাজু যখন এসব কথা ভাবছে তখন তার মা এসে তাকে বলল,“কিরে রাজু তোর মামাবাড়ি যাবি?” রাজু কোন কথা না বলে রাজি হয়ে গেল এবং দেরি না করে রেডি হয়ে পড়ল। রাজু তার মামাবাড়ি যেতে খুব ভালোবাসে। সেখানে সে তার মামাতো ভাইয়ের সাথে ঘুরে আর খেলেবেড়াতে খুব ভালোবাসে। এছাড়া রাজু শুনেছে তার মামাবাড়ির দোচালা ছাদের উপর দিয়ে জিনভুত যাওয়া-আসা করে। রাজু অনেকবার রাত জেগে চেষ্টা করে দেখেছে সত্যিই এরকম কিছু হয় কিনা, কিন্তু সে কিছুই দেখতে পায়নি। তবুও সে চিন্তা করল আর একবার চেষ্টা করে দেখা ভালো, যদি কিছু দেখতে পাওয়া যায়!
রাত প্রায় ০৮.৩০ এ রাজু ও তার মা রাজুর মামাবাড়ি পৌছে গেল। পারিবারিক কথাবার্তা এবং খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই ১০ টার ভেতরে নিজ নিজ ঘরে চলে গেল। রাজু ও তার মামাতো ভাই বাড়ির আঙিনার সামনের ঘরটি পেল শোয়ার জন্য। এ ঘরটি অন্যান্য ঘরগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন বলে রাজুর সুবিধাই হলো কারন সে এ ঘর থেকে পুরো বাড়িকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। রাজু ও তার মামাতো ভাই আসিফ এক ঘণ্টা মতো গল্প করল তারপর ঘরের বাতি নিভিয়ে দু’জন শুয়ে পড়ল।
 রাত প্রায় ০১.৩০ এর দিকে এক প্রচণ্ড আওয়াজে রাজুর ঘুম ভেঙে গেল। সে বুঝতে পারল না আওয়াজটা কিসের, তাই একটু ভয় পেয়ে বিছানার উপর বসে রইল। কিছুক্ষন পর আবার সেই আওয়াজ শুনতে পেল। এবার সে বুঝতে পারল আওয়াজটা ঘরের টিনের উপর কিছু পড়ার। রাজু এবার সাহস ফিরে পেল এবং বিছানা থেকে নেমে আসিফের ঘুম ভাঙানোর ব্যার্থ চেষ্টা করল। আসিফ যখন গভীর ঘুমে মগ্ন তখন রাজু দরজা খুলে ঘর থেকে বের হলো। চাঁদনি রাত বাইরে অনেক আলো ও বাতাস বইছে। রাজু সামনে এগিয়ে টিনের উপর তাকাল কিন্তু কিছু দেখতে পেল না, শুধু গাছের পাতা বাতাসে জোরে জোরে দুলছে। রাজু কিছু দেখতে না পেয়ে ঘরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিল। ঠিক তখন সে টিউবঅয়েল চাপার শব্দ শুনতে পেল। শব্দ শুনতে পেয়ে রাজু পেছনে তাকাল এবং দেখতে পেল কলতলায় সাদা কাপড় পরিহিত একজন মহিলা টিউবঅয়েল চাপছে! রাজু এই দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে গেল তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে গেল কলতলার দিকে। রাজু যখন ওই মহিলার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল তখন মহিলাটি তার কাজ থামিয়ে দিয়েছে। রাজু মহিলাটিকে প্রশ্ন করল,“আপনি এত রাতে এখানে কি করছেন?” মহিলাটি কোন উত্তর না দিয়ে আবার কল চাপতে লাগল। রাজু কোন উত্তর না পেয়ে রেগে গেল এবং সামনের দিকে ঝুকে দেখতে পেল কল দিয়ে পানির বদলে রক্ত উঠছে। রাজু এবার নিজেকে আর সামলাতে পারল না,সে প্রানপনে ঘরের দিকে দৌড়াতে থাকে। কিছুক্ষন দৌড়ানোর পর রাজু বুঝতে পারল তার অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। রাজু দৌড়ানো থামিয়ে দিল,দেখল মহিলাটি তার দিকে তাকিয়ে আছে এবং বলছে,“আমাদেরকে দেখার খুব সখ না তোর?” রাজু কিছু বুঝতে পারল না,দেখল মহিলাটির চেহারা সাধারণ মানুষের মতো নয়। তার একটা চোখ তাও আবার মণি সাদা,মুখমণ্ডল রক্তিম বর্ণের এবং দাঁতগুলো মুলোর মতো সাদা ও লম্বা। হঠাৎ তার মনে হলো কেউ পেছন থেকে জোরে মাথায় কিছু দিয়ে আঘাত করল। রাজু একটা আর্ত চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
রাজুর যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখল সে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। তার মাথায় ব্যাণ্ডেজ, সে বুঝতে পারল মাথার পেছন দিক চিনচিন করে ব্যাথা করছে। তাকে দেখে তার মা কাছে এলেন এবং জিজ্ঞেসা করলেন,“তুই রাতের বেলা বাইরে কি করতে গিয়েছিলি?” রাজু নিজের অজান্তেই বলে বসল সে পানি খেতে গিয়েছিল। রাজুর মা বলল,“জানিস তো কলতলাটা পিচ্ছিল, সাবধানে হাঁটতে পারিস নি? দিলি তো মাথা ফাটিয়ে।” রাজু চুপচাপ বসে রইল। সে ভেবে পাচ্ছিল না কেন এ কথা বলল। যখন সে সত্য কথা বলতে গেল তখন তার মনে হলো কেউ যেন তার মুখ চিপে ধরে রেখে অন্য কথা বলিয়ে নিল। রাজু যখন এসব ভাবছে তখন আসিফ এসে তার কানের কাছে মুখ এনে বলল,“আমার সাথেও এরকম হয়েছে।” রাজু বলল,“কি হয়েছে?” আসিফ একটা মুচকি হাসি হেঁসে বলল,“কিছু ঘটনার রহস্য ভেদ করার চেষ্টা না করাই ভালো।”

Photo by Alex Iby on Unsplash

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.